বিশেষ প্রতিনিধি: ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তরবর্তীকালীন সরকার একমাস অতিক্রম করলেও বাংলাদেশ অতীব গুরুত্বপূর্ণ শিল্প মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত কোন শিল্পনীতি খসড়া করতে পারেনি। এমনকি বিপ্লবোত্তর সময়ে এই মন্ত্রণালয়ের সংস্কার নিয়েও দৃশ্যত: কোন উদ্যোগ বা পদক্ষেপ দেখাতে পারেননি উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। যা শিল্পোদ্যাক্তাদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। মাননীয় উপদেষ্টা একজন সুশিক্ষিত মানবিক মানুষ হলেও ব্যবসা-বানিজ্য-শিল্প-কলকারখানা, উদ্যোগ ইত্যাদি বিষয় পরিচালনায় অভিজ্ঞ ও অভ্যস্ত নন। আইন ও মানবাধিকার যার পেশা, ধ্যান-জ্ঞান; তাঁকে শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মত টেকনিক্যাল মন্ত্রণালয় চাপিয়ে দেওয়া যথাযথ বলে মনে করছিনা। তাঁর প্রজ্ঞা, মেধা ও দক্ষতানুযায়ী দফতর দিলে তিনি আনন্দের সাথে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখতে পারবেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ এসএমই ফোরামের প্রেসিডেন্ট, গণসংগঠক ও রাষ্ট্রচিন্তক চাষী মামুন। আজ ১১ সেপ্টেম্বর সকাল ১০ টায় রাজধানীর মতিঝিলে শিল্পমন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের সাথে এসএমই ফোরামের একটি প্রতিনিধি দল সহ মিটিং শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের একথা বলেন চাষী মামুন। আদিলুর রহমান খান একই সাথে গৃহায়ন ও গণপুর্ত মন্ত্রণালয়েরও উপদেষ্টা।
চাষী মামুন আরও বলেন, বিপ্লবোত্তর সরকারের উপদেষ্টারা রেভ্যুলুশনারী স্পিরিটে দেশ সংস্কার করবেন এটাই জনাকাঙ্খা। এই সংস্কার শিল্পমন্ত্রণালয়েও আনতেই হবে। কিন্তু কিছুটা স্থবিরতা এবং হতাশা লক্ষ্য করা গেলো শিল্পমন্ত্রণালয়ে। উপদেষ্টা নিজে হয়তো এখনো থিতু হতে পারেননি এখানে। তাকে আমার উদ্যোক্তা বান্ধব মনে হয়নি, মনে হয়েছে আমলা মেজাজের এবং সরকারের মেয়াদ ও তার দায়িত্ব নিয়ে আড়ষ্ঠ! এটা মানতে পারিনা। ছাত্র-জনতার জীবন ও রক্তে পাওয়া স্বাধনীতার স্বাদ প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছাতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের এখনো দৃশ্যত কোন উদ্যোগ দেখছি না। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমাদেরকে একটি বিপ্লবী শিল্পনীতি প্রণয়ন করতে হবে। যেটা হবে আমাদের সার্বজনীন শিল্প বিপ্লবের হাতিয়ার।
রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে শিল্প, গৃহায়ন ও গণপুর্ত উপদেষ্টার নিকট বাংলাদেশ এসএমই ফোরামের পক্ষ থেকে ১১ টি প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। প্রস্তাবনাগুলো হলো:
১। অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার ব্যবস্থা চালু করতে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ভিত্তিক পৃথক ‘জাতীয় সমন্বয় কমিটি’ গঠন করুন।
২। “একটি বাড়ি একটি শিল্প” ‘শ্লোগান এবং টার্গেট নিয়ে গ্রামীণ শিল্প বিপ্লব ঘটাতে অন্তর্ভূক্তিমূলক সামাজ ও উৎপাদনশীল রাষ্ট্র ব্যবস্থার সূচনায় বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করুন।
৩। বাংলাদেশ এসএমই ফোরাম কর্তৃক গৃহীত পৃথক SME Bank এবং মোবাইল ফিনানসিয়াল সার্ভিস SME Cash প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পরামর্শ ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করুন।
৪। National SME Development & Trade Promotion Council গঠন করুন।
৫। এসএমই ফাউন্ডেশনকে আমুল সংষ্কার করে একটি বিপ্লবী পরিচালনা পরিচালনা পর্ষদ গঠন করুন এবং ঐ পরিষদে অন্তরভুক্তিমূলকভাবে বাংলাদেশ এসএমই ফোরাম এর প্রতিনিধি পরিচালক হিসেবে যুক্ত করুন।
৬। দুর্নীতি ও লুটপাট রোধে জাতীয় এসএমই পণ্যমেলার স্টল ফি সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখুন।
৭। দেশ-বিদেশে বাংলাদেশ শিল্পমেলা আয়োজন করুন।
৮। বিসিক এর শিল্পনগরী তৈরী ও প্লট বরাদ্দের ব্যাপক দুর্নীতি অনুসন্ধান করে পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাপ্রাপ্ত দোসরদের প্লট বাতিল করে বিপ্লবী উদ্যোক্তাদের মাধ্যে নতুন বরাদ্দ প্রদান করুন।
৯। একই ভাবে গণপূর্তের আওতাধধীন পুর্বাচল সহ সকল প্রকল্পে ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাপ্রাপ্ত দোসরদের প্লট বাতিল করে বিপ্লবী ছাত্র-নাগরিকদের মাঝে বরাদ্দ প্রদান করুন।
১০। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার লক্ষ্যে রাজউকে ছাত্র-নাগরিকদের মধ্য থেকে কমপক্ষে ৩ জন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করুন।
১১। একটি বিশেষায়িত প্রবাসী শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠা করুন এবং বাংলাদেশের সকল এয়ারপোর্ট, ল্যান্ডপোর্ট, নদী বন্দর, স্টেশন এবং এ্যাম্বেসী ও হাইকমিশনে এসএমই কর্ণার চালু করুন।
উপদেষ্টার সাথে বৈঠকে চাষী মামুনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করেন।