টিপু সুলতান, ঝিনাইদহ :
অদম্য ইচ্ছে ছিল জীবনে কিছু করে দেখানোর। আর্থিক প্রতিকুলতা সহ নানা প্রতিকুলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন হকার মিরাজের দু,ছেলে। দেখা গিয়েছে তাদের নিজেদের স্বপ্ন। দীর্ঘ কষ্ট এবং অধ্যঅবশায়ের মধ্যে থেকেই হকার মিরাজের দু, জাহাঙ্গির হোসেন ও হারুন মোল্লার শিক্ষা জীবন চালিয়ে যেতে হয়েছে। তাদের বাবা মুলত ফেরী করেই সংসার চালান। ছোট থেকেই দুই ভাই খুব মেধাবী ছাত্র। এই অধ্যাবসাই সমস্ত প্রতিকুলতাকে পেছনে ফেলে আজ ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। বাবা হকারের কাজ করে পাশাপাশি খুব কষ্ট করেই লেখাপড়া সম্পন্ন করেছে।
মিরাজুল হক পেশায় একজন পেশাদার হকার। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ মেইন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ফেরি করে বিভিন্ন খাদ্য দ্রব্য বিক্রি করেন। এখান থেকে যা আয় হয় সেটা দিয়েই চলে সংসার। এরমধ্যেই তার বড় ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন সদ্য ঘোষিত ৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছে। এছাড়াও তার ছোট ছেলে আলমগীর মোল্লা জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড়। দুই ছেলেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন এক সাথে।
মিরাজুল হক ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। মিরাজুল হকের স্ত্রী জুলেখা বেগম কালীগঞ্জ শহরের অগ্রনী ব্যাংকের পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে কাজ করেন। মিরাজুল হকের বড় ছেলে জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকল্যাণ ও গবেষণা বিষয়ে মাস্টার্স শেষ করেছেন ও ছোট ছেলে আলমগীর মোল্লা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র এবং জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড়।
কালীগঞ্জ মেইন বাসস্ট্যান্ড এলাকার ব্যবসায়ী খালেদ সাইফুল্লাহ জানান, মিরাজুল হক অনেক আগে থেকেই মেইন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যাত্রিবাহি বাস, সিএনজিতে বিভিন্ন জিনিসপত্র হকারি করে বিক্রি করেন। খুব কষ্ট করেন তিনি। তার এক ছেলে বিসিএস ক্যাডার ও ছোট ছেলে জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড়। তার দুই ছেলের এই অর্জনে খুবই খুশি।মিরাজুল হক জানান, ১৯৭৮ সাল থেকে তিনি হকার পেশায় যুক্ত। তার স্ত্রী অগ্রনী ব্যাংকের পরিচ্ছন্ন কর্মী। গাড়িতে তিলের খাঁজা, বুট,চানাচুর.রুমাল,তাল পাখা, বাদাম, ঝুরি ভাজা, বাদাম,চিরনি ও ছোলাভাজাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করেন। দুইজনের আয় দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো তাদের। অর্থের অভাবে দুই মেয়েকে লেখাপড়া করাতে না পেরে অল্প শি¶িত করে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু দুই ছেলেকে লেখাপড়া করাতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে তাদের। বিভিন্ন এনজিও থেকেও ঋণ নিয়েছেন তাদের পড়ালেখার খরচ মেটানোর জন্য। হকার মিরাজুল হক প্রায় ৪৬ বছর ধোরে এই পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। প্রতিদিন সকাল ৮ টায় দুপুরের খাবার সাথে নিয়ে চোলে আসেন কালীগঞ্জ মেইন বাসষ্টান্ডে, সারাদিন মালামাল বিক্রি করে সন্ধার পর তিনি নিজ বাড়িতে ফিরে যান। যে আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালায় ও দু, ছেলের লেখাপড়া করিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, এই পথ পাড়ি দিতে অনেক ঘাতপ্রতিঘাত পাড়ি দিতে হয়েছে। অভাবের সংসারে কোনদিন কার ও কাছে ছেলে মেয়েদের জন্য হাত পাতেননি তিনি। জীবন সংগ্রাম করে ছেলেদের লেখাপড়া করিয়েছেন। হাজার ও কষ্ট করেছেন কিন্তু ছেলেদের ক্ষেত্রে অভাবের ঘানি তিনি বুঝতে দেয়নি। মিজারের ইচ্ছা ছিল ছেলেদের মানুষ করে সমাজের দাড় করাবে। অবশেষে আলোর মুখ দেখতে পেয়েছে। মিরাজের বড় ছেলে জাহাঙ্গির আলম এক সাথে জনতা ব্যাংক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি পেয়েছিলেন।
মিরাজুল হকের স্ত্রী জুলেখা বেগম জানান, ছেলে দুটির পড়ালেখা করাতে তাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। খেয়ে না খেয়ে তাদের পড়ালেখার খরচ যোগাতে হয়েছে। ছেলেদের এই সাফল্যে তিনি খুবই খুশি। সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি।
মিরাজুল হক পেশায় একজন হকার সে কারনে কেউ তেমন খোজ খবর নিতে চান না। জানতে চান না তাদের সুখ-দুঃখের কথা। সমাজের আর দশটা মানুষের মতো তাদেরও আছে সুন্দর আগামীর স্বপ্ন আছে জীবনের সুখ আর দুঃখের অনেক গল্প। কিন্তু তাদের জীবনপাতার গল্পগুলো লিখা হয় জীবন সংগ্রামের কাহিনী দিয়ে। নিরবে নিভৃতে তারা চালিয়ে যায় জীবন সংগ্রাম। মিরাজুল হক বলেন, স্বপ্ন ছিল ছেলেরা পড়াশোনা করে চাকরি করবে, এজন্যইতো এ শ্রম। এ ভাবে কষ্ট করে চলি, বৃষ্টির দিন ব্যবসা বন্ধ রাখেনি সন্তানদের কথা চিন্তা করে। হাসিমাখা মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই যে তার এই কাঁধে পরিবারের কড় দায়িত্ব। দুই মেয়ে কে বিয়ে দেবার পর দুই ছেলে কে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়তে চাওয়াই তার ছিল লক্ষ্য ।
মিরাজুল হক প্রতিদিন ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে, কালীগঞ্জ বাসষ্টান্ডে জীবন ও জীবিকার তাগিদে চোলে আসে। বিক্রি করেন বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য। এসব বিক্রি করে কোন রকম চাহিদা মিটাতে পারলে ও জীবনের চাহিদা মিটাতে পারেনি। হকার জীবনের নিচে চাপা পড়ে থাকে যেন তাদের কষ্ট।
টিপু সুলতান
ঝিনাইদহ
১১/৮/২৩