নিজস্ব সংবাদদাতা : জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে সাংবাদিক নেতা মহিদুল ইসলাম মন্টু । বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন বিএফইউজের সাবেক সহকারী মহাসচিব, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক যশোর জেলা প্রতিনিধি মহিদুল ইসলাম মন্টু আজীবন সাংবাদিক সমাজের রুটি রুজির আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রনী ভুমিকা পালন করেছেন। শেষ বয়সে এসে মন্টু ভাই গঠন করেন যশোর জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন। নামে আরো একটি সংগঠন। যে ইউনিয়নটি জেলা ব্যাপী তাদের কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন দাপটের সাথে। মহিদুল ইসলাম মন্টু ছিলেন তার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি প্রেস ক্লাব যশোরের একজন সিনিয়র সদস্যও বটে। মন্টু ভাই
সমাজের অসহায় মানুষদের দুঃখ কষ্টকে সারাজীবন খবরের শিরোনাম করে সে সব সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেছেন। সাধ্যমতো সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন সব সময়। বিটিভির সাংবাদিক হিসেবে সরকারের নানা উন্নয়নের খবর লিখেছেন। মন্ত্রী এমপি, ডিসি এসপির বিভিন্ন ভালো কাজের খবর তৈরী করেছেন বার বার।
কিন্তু আজ এই লড়াকু সাংবাদিক নেতা ও বিশিষ্ট ট্রেডইউনিয়নিষ্ট মন্টু ভাই অসহায় হয়ে খবরের শিরোনাম হয়ে উঠেছেন। অসহায়, সহায় সম্বলহীন এই মানুষটি আজ নানা রোগে শোকে আক্রান্ত হয়ে নিজ গ্রামে চৌগাছার নারায়নপুর ইউনিয়নের হোগলডাঙ্গা গ্রামে বোনের অাশ্রয়ে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছেন। প্রায় বস্ত্রহীন হয়ে মেঝেতে পড়া থাকা মানুষটির সব শেষ হয়ে যাচ্ছে দ্রুত। তাকে সব সময প্যাম্পার পড়িয়ে রাখতে হচ্ছে। তার বাক শক্তি লোপ পেয়েছে। ব্রেন স্ট্রোক করে স্মৃতি শক্তিও লোপ পেয়েছে। জীর্ণশীর্ণ শরীর নিয়ে মৃত্যুর অপেক্ষা আর কি। সুচিকিৎসা করানোর পরিস্থিতি নেই বললেই চলে। খাবার দাবারের করুন হাল। ব্লেন্ডারে পিষে যৎসামান্য খাবার খেয়ে কোন রকমে হাড্ডির ভেতরে আত্নাটা ধুক ধুক করছে। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার লেশ মাত্র নেই।
সাংবাদিকদের অধিকার আদায় আন্দোলনের আপোসহীন সেই নেতার কথা বলার শক্তি নেই। কাউকে চিনতে পারছেন না। তিনবার স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে আজ শয্যাশায়ী তিনি।
অসায়ত্বের কারনে ছাড়তে হয়েছে যশোর। যে যশোরের রাজপথে মন্টু ভাইয়ের ছিল দীপ্ত পদচারনা সেই যশোরে তার আজ ঠাই নেই। অজপাড়া গায়ের একটি টিনের ঘরে কোন রকমে অন্যের দারস্থ হয়ে একটু বেচে থাকার জন্য কি আপ্রান চেষ্টা – যা দেখার মানুষের বড্ড অভাব। তার সতীর্থরাও আজ ব্যস্ততার জন্য ঠিকমতো সময় দিতে পারছেন না। ঢাকার সাংবাদিক নেতাদের ফুসরৎ নেই নানা কারনে। অজপাড়া গায়ে পড়ে থাকা এই মন্টুকে মনে রাখার প্রয়োজনীয়তা কেউ অনুভব করছেন বলে মনে হয় না। একমাত্র প্রতিবন্ধি ছেলেকে বুকে নিয়ে মিসেস মন্টু কখনো যশোরে কখনো নড়াইলে আবার কখনো চৌগাছার হোগলডাঙ্গা গ্রামে দৌড়াদৌড়ি করছেন। তার পাশে দাড়ানোর মতো নেই কেউ।
গত বৃহস্পতিবার প্রেস ক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুনের নেতৃত্বে নির্বাহী কমিটির সদস্যরা ছুটে যান হোগলডাঙ্গা গ্রামের শফি মাস্টারের বাড়িতে। এই বোনাইয়ের বাড়িতেই থাকচেন মন্টু ভাই। অসুস্থতার কারনে ক্লাবের সাধারণ সম্পাদ এস এম তৌহিদুর রহমান যেতে না পারলেও তিনি সব সময় মোবাইলে টিমের সমস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন।
সাংবাদিক নেতারা বেশ কিছু সময় মন্টু ভাইয়ের পাশে বসে তার সাথে সঙ্গ দেওার চেষ্টা করেন। বাকরুদ্ধ মন্টু ভাই ফ্যাল ফ্যাল নয়নে বার বার সাংবাদিক সহকর্মীদের দিকে তাকিয়ে কি যেন বলার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তার সেই চেষ্টা বার বার ব্যর্থ হচ্ছিল। তার বর্তমান পরিস্থিতি দেখে আবেগ অাপ্লুত হয়ে পড়েন সাংবাদিক সহকর্মীবৃন্দ। প্রায় ১/দেড় ঘন্টা নীরবে অবস্থানের পর সাংবাদিকবৃন্দ নীরবে চোখের জল মুছতে মুছতে হোগলডাঙ্গা গ্রাম ছেড়ে আসেন। পেছনে রেখে আসেন তাদের এক সময়ের লড়াকু সহকর্মী বাকহীন জীর্ণশীর্ণ মহিদুল ইসলা মন্টু ভাইকে।