-খান মোহাম্মদ সালেক
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রত্যাশা নিয়ে দেশবাসী অপেক্ষা করছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র ছয় মাস আগে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-১৭ আসনের উপ নির্বাচনের প্রতি সকলের দৃষ্টি ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে এই নির্বাচন কতটা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হয় তার প্রতি দৃষ্টি ছিল সবার। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হলেও ভোটারের উপস্থিতি ছিল হতাশাজনক। নির্বাচনে ১১ দশমিক ৫১ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। দিনব্যাপী ভোট শেষ হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে একটি অপ্রীতিকর ঘটনা নির্বাচন কমিশনকে কিছুটা হলেও বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে।
বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলনের কর্মসূচীর অংশ হিসেবে দু’দিনব্যাপী পদযাত্রার ঠিক আগের দিন এই নির্বাচন সরকারের জন্যও ছিল একটি চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সব ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হলেও ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। অনেক কেন্দ্রে নির্বাচনী কর্মকর্তারা অলস সময় কাটিয়েছেন ভোটার না থাকায়। এতে প্রশ্ন উঠেছে মানুষ কি ভোট দিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন?
এ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। একথা সত্যি যে, ঢাকা-১৭ আসন রাজধানীর এমন একটি এলাকা যেখানে খুব কাছাকাছি দূরত্বে ভোট কেন্দ্র রয়েছে। মানুষ ঘর থেকে বেরিয়েই কয়েকশ’ গজের মধ্যে ভোট কেন্দ্র পেয়ে যাচ্ছেন। যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মানুষ পায়ে হেঁটে যেতে পারছেন ভোট কেন্দ্রে। তবুও ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম।
অনেকের ভাষ্য, ভোটের ফলাফল কি হবে তা অনেকে আগে থেকেই অনুমান করছিলেন। তাই তারা কষ্ট করে আর ভোট দেয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। কিন্তু এই এলাকায় নির্বাচনে অংশ নেয়া দলগুলোর প্রচুর নেতা-কর্মী ও সমর্থক রয়েছেন। তারা কি এমন অনুমানের ওপর ভোট দানে বিরত থাকবেন?
আবার অনেকে বলছেন, মাত্র পাঁচ বা ছয় মাসের জন্য একজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন। তিনি নির্বাচিত হলেও তেমন কোন কাজ করার সুযোগ পাবেন না। তাই এই নির্বাচনকে গুরুত্ব দেননি অনেক ভোটার।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে হবে নাকি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে তা নিয়ে যখন জল্পনা কল্পনা চলছে তখন এই সরকারের অধীনে এই উপনির্বাচন কতটা সুষ্ঠু হয় তা নিয়ে মানুষের আগ্রহ ছিল। কিন্তু ভোটার উপস্থিতি কম থাকায় এই নির্বাচন নানাভাবে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। অবশ্য কিছুদিন আগে হয়ে যাওয়া সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনগুলোতে বিপূল সংখ্যক ভোটার উপস্থিত ছিলেন। এ নিয়েও মানুষের মধ্যে নানা বিশ্লেষণ রয়েছে। অনেকে বলছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মেয়র কিংবা চেয়ারম্যান প্রার্থীরা দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করলেও কাউন্সিলর ও মেম্বার প্রার্থীরা দলীয় প্রতীকে ভোট করেননি। আর এলাকার মানুষ নিজ পছন্দের কাউন্সিলর বা মেম্বার নির্বাচনের জন্য ভোট কেন্দ্রে বেশী উপস্থিত হয়েছেন।
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে সরকার পক্ষ এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব বলে দাবি করলেও মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এই উপনির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে বলছে, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। ভোটার উপস্থিতি কম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলমের (হিরো আলম) ওপর হামলাকে বড় করে দেখছে বিএনপি। হিরো আলমের ওপর হামলার বিষয়টি দুঃখজনক বলে উল্লেখ করে সরকারী দলের প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাত অপরাধীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি করেছেন। তিনি বলেন, হামলাকারীরা তার দল আওয়ামী লীগের হলেও তাদের বিচার করতে হবে। রিটার্নিং অফিসার বলেছেন, হিরো আলম ৬০/৭০ জন লোক নিয়ে কেন্দ্রে এসেছিলেন। কেন্দ্রের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ তাকে বাধা দেয় এবং পরে সুরক্ষা দিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। কেন্দ্রের ভেতরে কোন মারধর হয়নি। অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান তিনি।
এ নিয়ে হিরো আলমের বক্তব্য, তাকে মারধর করার সময় তিনি সংশ্লিষ্ট কারো সহযোগিতা পাননি। সকালের দিকেও তিনি অভিযোগ করেছিলেন, তার এজেন্টদের ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে আগামী বেশ কিছুদিন আলোচনা বিশ্লেষণ হবে। তবে এই নির্বাচন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন প্রভাব ফেলবে কিনা সেই বিচার এখনই করা যাবে না। কারণ আগামী নির্বাচনে কেমন সরকার থাকছে এবং নির্বাচন অংশ গ্রহণমূলক হচ্ছে কিনা তার ওপরই নির্ভর করবে আগামী নির্বাচন। কারণ সরকার পতনের এক দফা নিয়ে বিএনপি এবং শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা নিয়ে আওয়ামী লীগ অগ্রসর হচ্ছে। সময়ই বলে দেবে কেমন নির্বাচন পেতে যাচ্ছেন দেশবাসী।
মন্তব্য