মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধি : নওগাঁর মান্দায় প্রেগনেন্সি টেস্টের ভূয়া রিপোর্ট দিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা ধর্ষণ মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন সচেতন এলাকাবাসী।
বুধবার বিকেল ৪ টায় উপজেলার প্রসাদপুর ইউনিয়নের ইনায়েতপুর গ্রামে চেয়ারম্যান পাড়ার রাস্তায় ঘন্টাব্যাপী এ কর্মসূচি পালন করেন গ্রামবাসী। এতে ইনায়েতপুর গ্রামের কয়েকশ নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।
এসময় হারুন-অর রশিদের সভাপতিত্বে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ভূক্তভোগী ফজলে রাব্বি’র মা রেবেকা সুলতানা, ছোট ভাই মুরাদ হোসেন মাফি, প্রতিবেশী আবুল মন্ডল, ফারহানা তাসমিন, শিউলী আক্তার, সাথী এবং ইতি প্রমূখ।
বক্তারা বলেন, মান্দা কারিগরি ও কৃষি কলেজের অফিস সহকারী কাম- কম্পিউটার অপারেটর ফজলে রাব্বি’র বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণ মামলায় প্রেগন্যান্সি টেষ্টের চাঞ্চল্যকর রহস্য ফাঁস হওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে নওগাঁর মান্দা উপজেলার প্রসাদপুর ইউনিয়নে। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ভূয়া প্রেগন্যান্সি টেস্টের রিপোর্ট দিয়ে মিথ্যা,বানোয়াট ও ভিত্তিহীন ধর্ষণ মামলায় কোন রকম তদন্ত ছাড়াই অতি উৎসাহী হয়ে পুলিশ গভীর রাতে এক ঘন্টার মধ্যেই তাকে আটক করায় তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান,ফজলে রাব্বি (২৮) প্রসাদপুর ইউনিয়নের ইনায়েতপুর (মন্ডলপাড়া) গ্রামের মৃত মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে । পেশায় তিনি একজন অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর। এর পাশাপাশি তার একটি পেয়ারা বাগান রয়েছে। চাকুরির পাশাপাশি তিনি পেয়ারা বাগান দেখাশুনা করতেন। অপরদিকে মামলার বাদি কুসুম্বা ইউনিয়নের ছোট বেলালদহ গ্রামের (মেডিকেল মোড় এলাকার) বাসিন্দা। বাদীর বাবা আকবর হোসেন পেশায় একজন অফিস সহকারী (অবসরপ্রাপ্ত কেরানী) । তিনি বড় বেলালদহ ফাজিল মাদ্রাসায় কর্মরত ছিলেন। বাদীর বাবা’র জন্মস্থান নওগাঁ’র মান্দা উপজেলার কাঁশোপাড়া ইউনিয়নের কৈবত্যপাড়া গ্রামে বলে জানা গেছে । সম্প্রতি ফজলে রাব্বি’র পেয়ারা বাগানে পেয়ারা নিতে গিয়ে তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা শুরু করে আফিমা সুলতানা মিতু (২৮) নামে ওই নারী।
এসব প্রতারণার ফাঁদে ফেলে আত্মসাতকৃত অর্থ দিয়ে বর্তমানে মেডিকেল মোড় (শ্মশানঘাটি) এলাকায় একটি তিন তলা বিশিষ্ট নিজস্ব ভবনে বিলাশবহুলভাবে জীবন যাপন করছে সে। ১৯৯৫ সালে জন্ম ওই প্রতারক নারীর। অপ্রাপ্ত অবস্থায় ২০০৭ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে প্রথমে মান্দার প্রসাদপুরের শহিদুল ইসলামের ছেলে সামসুল আরেফিন ওরফে সুজনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় সে।এরপর সেখান থেকে বিবাহ বিচ্ছেদের কয়েক বছর পর নানা-মামা এবং খালার পরিচয়ে একের পর এক ছেলেকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাত করেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। তাদের দাবি যে, ওই প্রতারক নারী’র বড় মামা বেলাল হোসেন খান প্রসাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও একজন বিএনপি নেতা । মেজো মামা াাব্দুস সালাম অবসরপ্রাপ্ত আর্মি ও একজন আ’লীগ নেতা, ছোট মামা গোলাম হোসেন খান অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক এবং খালা পাপিয়া মান্দা থানা আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ছিলেন (জাল সার্টিফিকেটের কারণে তার খালা ওই প্রতিষ্ঠান থেকে চাকুরিচ্যুত হয়)। তাদের পরিচয়ে এসব অপকর্ম করে আসছিলো সে। তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। তার ব্যাপারে কেউ কিছু বললেই মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে থাকেন। তার প্রতারণার ফাঁদে পড়ে পরবর্তীতে এসব ব্যাপারে কেউ সমঝোতা করতে চাইলে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে বসতো সে। তার দাবিকৃত টাকা দিতে না পারলেই মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আত্মসাত করায় তার কাজ।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, তার প্রতারণার ফাঁদে পা দেওয়ার পর অভিনব কায়দায় একাধিক ছেলের কাছ থেকে সে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আর এ পর্যন্ত সে বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১০ জনের অধিক ছেলেকে অভিনব কায়দায় প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বিয়ে করার পর তাদের সকলকে সর্বশান্ত করে দিয়েছেন ওই নারী। একের পর এক এসব প্রতারণার ফাঁদে পড়ার পরেও কোন প্রতিকার না পেয়ে নিরবে সহ্য করে যাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। এদের মধ্যে একজন জজ, কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যাবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজন রয়েছেন। সম্প্রতি, ওই প্রতারক নারী প্রেমের ফাঁদে ফেলে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে বসে ফজলে রাব্বি’র কাছে । পরবর্তীতে তার দাবিকৃত টাকা দিতে না পারার কারণে গভীর রাতে থানায় গিয়ে একটি মিথ্যা ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন ওই নারী। ওই মামলায় জেলে যেতে হয়েছে ফজলে রাব্বিকে। শুধু ফজলে রাব্বিই না এর থেকে পরিত্রাণ পেতে চান অন্যান্য ভুক্তভোগীরা।
মামলার এভিডেন্স স্বরুপ গত ২৭ জুন যে প্রেগন্যান্সি টেষ্টের রিপোর্টের কপি দেয়া হয়েছে সেটার কোন তথ্য নেই আইডিয়াল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনষ্টিকের রেজিষ্ট্্রার খাতায়। অপরদিকে ওই রিপোর্টে জাহিদ হাসান নামে যে মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ল্যাব) এর নাম পদবী উল্লেখ করা হয়েছে তিনি ওই হসপিটাল এন্ড ডায়াগনষ্টিকের কেউ না বলে জানিয়েছেন আইডিয়াল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনষ্টিকের মালিক গ্রুপের পরিচালক আমিনুল ইসলাম। তার দাবি যে, বর্তমানে যিনি ল্যাব টেকনোলজিষ্টের দায়িত্ব পালন করেন তার নাম আবু সাইদ। অত্র প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য জালিয়াতির মাধ্যমে প্রেগন্যান্সি টেষ্টের রিপোর্টটি তৈরী করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী আফিমা সুলতানা মিতু কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মান্দা থানার ওসি-তদন্ত মেহেদী মাসুদ বলেন, গত ১ জুলাই রাতে ওই নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে মান্দা থানায় একটি মামলা দায়ের করায় ফজলে রাব্বিকে তার বাড়ি থেকে আটক করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য