রায়হান আহমেদ, ময়মনসিংহ :এই মর্মান্তিক হত্যাকান্ড ও আসামীদের গ্রেফতার বিষয়ে আজ দুপুরে ময়মনসিংহ পুলিশ সুপারের সন্মেলন কক্ষে এক প্রেস বিফ্রিং করা হয়। প্রেস বিফ্রিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাংবাদিকদেরকে এই হত্যাকান্ডের রহস্য ও আসামীদের গ্রেফতারের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয় গত ২৬/১১/২০২৪ ইং তারিখ রাত সাড়ে ১১ টায় কোতোয়ালী থানাধীন চর সিরতা গ্রামের সরকারবাড়ী টেকের মাথা কালভার্ট সংলগ্ন পাঁকা রাস্তার পূর্ব পাশে ফসলী জমিতে এক অজ্ঞাতনামা যুবকের গলাকাটা লাশ পড়ে থাকার সংবাদ পেয়ে কোতোয়ালী থানা পুলিশ ও জেলার ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গমন করেন।
এলাকাবাসী ও মৃতের আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে মৃতের পরিচয় সনাক্ত করা হয়। মৃত আকাশ মিয়া (২০) কোতোয়ালী থানাধীন চর হাসাদিয়া এলাকার বাসিন্দা ও পেশায় একজন অটো চালক।
অজ্ঞাতনামা হত্যাকারীরা ধাঁরালো অস্ত্র দ্বারা ভিকটিমকে জবাই করে ধানক্ষেতে ফেলে রেখে তার অটো নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পলায়ন করে।
হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ধাঁরালো অস্ত্র ও ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইলটি ঘটনাস্থল হতে আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয় যার নং-৬৪, তারিখ- ২৭/১১/২০২৪ ইং, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০।এ হত্যা ঘটনাটি চর সিরতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকাসহ সমগ্র থানা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
মামলা রুজু হওয়ার পর থেকে জেলা গোয়েন্দা শাখা, ময়মনসিংহের একটি চৌকস দল পুলিশ সুপার, ময়মনসিংহের দিক-নির্দেশনা ও অফিসার ইনচার্জ, জেলা গোয়েন্দা শাখা-এর নেতৃত্বে মামলার রহস্য উদ্ঘাটন, আসামী গ্রেফতার ও চোরাই অটো উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে।
অতপর গত ২৯/১১/২০২৪ ইং তারিখ ভোর সাড়ে ৪ টায় ঢাকা মহানগরীর খিলগাঁও গার্লস স্কুলের পেছনের বস্তি থেকে হত্যাকান্ডে জড়িত আসামী মোঃ রবিন মিয়া (১৯)-কে গ্রেফতার করা হয় এবং তার দেয়া তথ্য মতে ভোর সাড়ে ৫ টায় হত্যাকান্ডের মূল আসামী মোঃ মিলন (২০)-কে খিলগাঁও এলাকার অপর একটি বস্তি থেকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়ের প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানাধীন জামিরদিয়া মাস্টারবাড়ী এলাকার জনৈক সাগর মিয়ার গ্যারেজের সামনে থেকে চোরাই অটো উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয় জানায় যে, ভিকটিম আকাশ ও তারা একই গ্রামের বাসিন্দা। আসামী মিলন ঢাকায় পোশাক শিল্পের শ্রমিক এবং আসামী রবিন চালের আড়তে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে।
ফেইসবুকে একটি মেয়ের সাথে পরিচয়ের সূত্র ধরে ভিকটিম আকাশ ও আসামী মিলনের দ্বন্দ্ব শুরু হয়।এই সংক্রান্তে প্রায় দুই মাস আগে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়।
এই বিরোধের জের ধরে আসামী মিলন ও রবিন ঢাকা থেকে আকাশকে হত্যা ও তার অটো ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে বাড়িতে আসে।ঘটনার দিন সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৮ টায় আসামী মিলন ভিকটিম আকাশকে ফোন করে তার অটো নিয়ে আসতে বলে।
ভিকটিম আকাশ সন্ধ্যা আনুমানিক সোয়া ৭ টায় অটো নিয়ে আসামী মিলনের কাছে আসে। আসামী মিলন ও রবিন আকাশের অটোতে কোতোয়ালী থানাধীন পরানগঞ্জ ও বোররচরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরাফেরা করতে থাকে
এক পর্যায়ে একই তারিখ আনুমানিক রাত সাড়ে ৮ টায় অটোর পেছনের সিট থেকে আসামী মিলন ভিকটিম আকাশের গলায় ধাঁরালো অস্ত্র দিয়ে সজোরে পোঁচ দেয় এবং ভিকটিমের মৃতদেহ অটো থেকে প্রথমে রাস্তায় ও পরে আসামী রবিনের সহযোগিতায় রাস্তার পার্শ্বে ধানক্ষেতে ফেলে রেখে অটো নিয়ে চলে যায়।পুলিশ জানায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আসামীদেরকে অতিসত্বর বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হবে।
মন্তব্য