খান মোহাম্মদ সালেক-
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে দেশের রাজনীতি। এই উত্তাপে শো ডাউনের ক্ষেত্রে কে কতটা জনসমর্থন নিয়ে এগুতে পারবে তা নিয়ে চলছে জল্পনা কল্পনা। সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আগামীকাল মঙ্গলবার ও পরদিন বুধবার ঢাকাসহ সারাদেশে পদযাত্রার কর্মসূচী রয়েছে বিএনপির। অন্যদিকে সরকারী দল আওয়ামী লীগও ঘোষণা দিয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের এক দফা।
বিএনপির পদযাত্রার প্রস্তুতি পর্বে তেমন কোন শো ডাউন করতে পারেনি দলটি। ঢাকা মেট্রপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নির্দেশনা ছিল মাইকিং করে শব্দদূষণ তৈরি না করা। সেই অনুযায়ী বিএনপি পদযাত্রার পক্ষে মাইকিং না করে রাজধানীর কিছু এলাকায় লিফলেট বিতরণ করেছে। আবার পদযাত্রার রুট পরিবর্তনেরও পরামর্শ দিয়েছে ডিএমপি। সে অনুযায়ী ১৮ জুলাই সকাল ১০টায় গাবতলী থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে বাহাদুর শাহ পার্কে শেষ হবে। আর একটি পদযাত্রা গাবতলী থেকে শুরু হয়ে মগবাজারে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির পদযাত্রায় যুক্ত হবে। ১৯ জুলাই সকাল ১০টায় উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্তÍ পদযাত্রা করার কথা রয়েছে। দু’দিনের কর্মসূচীই চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। পদযাত্রা ছাড়াও সভা-সমাবেশ, গণমিছিল ও গণঅনশনসহ আরও কর্মসূচীর পরিকল্পনা রয়েছে। ২২ জুলাই বিএনপি কার্যালয়ের সামনে তারুণ্যের সমাবেশ রয়েছে দলটির। এসব কর্মসূচীর মাধ্যমেই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে চায় বিএনপি।
বিএনপির পদযাত্রার পাল্টা কর্মসূচী হিসেবে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউমনের সামনে থেকে ধানমন্ডী ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত শোভাযাত্রা করবে। আর বুধবার ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ শোভাযাত্রা করবে তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড় থেকে মহাখালী পর্যন্ত। দু’টি শোভাযাত্রায়ই নেতৃত্ব দেবেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
দুই দলের পদযাত্রা এবং শোভাযাত্রা নিয়ে বিপূল লোক সমাগম ঘটিয়ে বড় রকমের শো ডাউন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে দু’পক্ষই। তবে শো ডাউনে কোন দল এগিয়ে থাকে তা দেখার অপেক্ষায় দেশবাসী।
গত প্রায় ১০ বছর ধরেই বিএনপি বহু সমাবেশ করতে গিয়ে পুলিশের বাঁধায় তা করতে পারেনি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি তা প্রতিহত করার জন্য অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল। তবে নির্বাচন প্রতিহত করা যায়নি। পরের বছরও একই সময়ে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়। এক পর্যায়ে জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনায় এনে আসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয় দলটি। তবে তাদের ভাষায় অনির্বাচিত সরকারের পদত্যাগ ও তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি থেকে তারা সরে যায়নি। তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অনড় থাকলেও এ নিয়ে রাজনীতির মাঠ গরম করতে পারেনি দলটি। নানা মামলায় জড়িয়ে দলটির নেতারাও প্রকাশ্যে মিছিল সমাবেশে অংশ নেননি। এক পর্যায়ে বিএনপির পক্ষ থেকে শুধু প্রেস রিলিজ এবং টিভি চ্যানেলগুলোতে ভিডিও ক্লিপ পাঠিয়ে তাদের সাংগঠনিক কর্মকাÐ চালিয়েছেন।
২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি সমমনা দলগুলোর সাথে জোট করে নির্বাচনে অংশ নিলেও নির্বাচনের ফল তাদের পক্ষে নিতে পারেনি। এই নির্বাচন নিয়ে আগের রাতে ভোটের অভিযোগ থাকলেও বিএনপি এর বিরুদ্ধে জনমত গঠনে ব্যর্থ হয়। বিএনপির তৎপরতা এতটাই ঝিমিয়ে পড়ে যে দলটি আর দাঁড়াতে পারবে না বলে জনমনে একটা ধারণা তৈরি হয়ে যায়।
তবে গত বছরের শেষ দিকে বিএনপি সারাদেশে বিভাগীয় সমাবেশ করতে গিয়ে ব্যাপক সাড়া পায়। তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মী ছাড়াও বিপূল সংখ্যক সমর্থক এসব সমাবেশে অংশ নেন। সমাবেশ পÐ করার জন্য পরিবহণ ধর্মঘটসহ নানা কর্মসূচী দিয়েও সমাবেশে মানুষের উপস্থিতি ঠেকানো যায়নি। কিন্তু ঢাকায় কেন্দ্রীয় সমাবেশ করতে গিয়ে হোচট খায় বিএনপি। সমাবেশের দু’দিন আগেই পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয় দলের নেতা-কর্মীদের। গ্রেফতার হন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। এসময় দলের নেতাকর্মীরা সাহস হারিয়ে ফেলেন। পল্টনে ঘোষিত সমাবেশ করতে পারেনি দলটি। শেষ পর্যন্ত গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করতে হয়েছে। সেই সমাবেশে বিপূল লোক সমাগম হলেও তা ধরে রাখতে পারেনি বিএনপি। এর পরে বড় কোন শোডাউন তাদের ছিল না।
নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এবার দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা অনেকটাই চাঙ্গা। সরকারও সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। গত বুধবার বিএনপির সমাবেশ করার ক্ষেত্রে কোন বাধা দেয়া হয়নি। সারাদেশ থেকে বিপূল সংখ্যক নেতা-কর্মী ও সমর্থক যোগ দেন এই সমাবেশে। এখন আর কোন দাবি নয়, সরকার পতনের এক দফা দাবিতেই এগিয়ে যাবে দলটি। সাথে রয়েছে সমমনা আরও কয়েকটি দল। তবে বিএনপি ছাড়া এসব সমমনা দলের কোন জনসমর্থন বা সাংগঠনিক শক্তি নেই বললেই চলে। পরপর দু’দিনের পদযাত্রায় বিএনপি কেমন জনসমাগম ঘটাতে পারে এবং তা সরকারকে ভাবিয়ে তুলতে পারে কিনা তা দেখার অপেক্ষায় দেশবাসী। কারণ গত প্রায় ১৫ বছরের শাসনামলে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, গ্যাস, তেল, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিসহ নানা সংকটেও বিএনপি কোন আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। এমনকি অনেক কর্মসূচী দিয়েও সেসব কর্মসূচীতে অনেক নেতা-কর্মীকে দেখা যায়নি।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নির্বাচিত সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে বলে যে এক দফা ঘোষণা দিয়েছে সে ক্ষেত্রেও শোডাউন কতটা করতে পারবে সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ দলের কেন্দ্রীয় অনেক নেতাই স্বীকার করেন যে, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে অনেকের মধ্যে অলসতা চলে এসেছে। এলাকার সাথে যোগাযোগ নেই অনেক নেতা ও এমপির। গত প্রায় ১৫ বছরে দেশীয় অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণসহ সারাদেশে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ হলেও তা কতটা পুঁজি করে সরকারী দল আওয়ামী লীগ এগুতে পারবে তা সময়ই বলে দেবে। কারণ উন্নয়নমূলক কাজের দীর্ঘসূত্রিতায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে অনেক। তাছাড়া এসব কাজে দফায় দফায় অর্থ বরাদ্দ বাড়ানোর কারণে ব্যাপক দুর্নীতির প্রশ্ন তুলেছেন মানুষ।
মন্তব্য